‘আমার স্বামী জুলাইয়ে আন্দোলন করছিল। সে দেশের জন্য প্রাণ দিছে। তার কবর জিয়ারত করে ফেরার পথে আমার মেয়েটা ধর্ষণের শিকার হইল। দেশের জন্য আমার স্বামী যে প্রাণ দিল, তার প্রতিদানে কি আমাদের এইডাই পাওয়ার ছিল?’
আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলায় দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার কলেজছাত্রীর মা। তিনি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই রাজধানীর মোহাম্মদপুরে তাঁর স্বামী গুলিবিদ্ধ হন। ১১ দিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে শোকে ভেঙে পড়লেও মেয়ের এমন সর্বনাশ মেনে নিতে পারছেন না তিনি।
গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় বাবার কবর জিয়ারত করে নানাবাড়িতে ফেরার পথে স্থানীয় সোহাগ মুন্সীর ছেলে সিফাত মুন্সী ও একই এলাকার এক কিশোর তাকে ধর্ষণ করে। এরপর মোবাইল ফোনে ধর্ষণের দৃশ্য ধারণ করে এবং কাউকে না বলতে ভয়ভীতি দেখিয়ে ছেড়ে দেয়।
পরিবারের পক্ষ থেকে দুমকী থানায় অভিযোগ দায়েরের পর পুলিশ দ্রুত অভিযান চালিয়ে সিফাতসহ দু’জনকে গ্রেপ্তার করে। তারা পুলিশের কাছে ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
ভুক্তভোগীর মা বলেন, ‘স্বামী হারানোর শোক কাটাইতে না কাটাইতেই আমার মেয়ের সর্বনাশ হইল! আমি আমার মেয়ের নিরাপত্তা চাই, পরিবারের নিরাপত্তা চাই। সুষ্ঠু বিচার না পাইলে আমি তিন সন্তান নিয়া কীভাবে বাঁইচা থাকমু? ওদের শাস্তি না হইলে আজকে আমার বড় মেয়ের সর্বনাশ হইছে, কালকে ছোট মেয়ের হইব। তাই আমি ধর্ষকদের ফাঁসি চাই।'
ঘটনার পর পটুয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। বিভিন্ন সংগঠন ও শিক্ষার্থীরা দ্রুত বিচার ও ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন।
২১ মার্চ পটুয়াখালীতে আসেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন ও এবি পার্টির আহ্বায়ক ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার। তারা ভুক্তভোগীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে মোবাইল ফোনে ভুক্তভোগীর মায়ের সঙ্গে কথা বলেন।
এছাড়া বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণঅধিকার পরিষদ, জাতীয় নাগরিক পার্টি ও এবি পার্টির পক্ষ থেকে স্থানীয় নেতারা হাসপাতালে গিয়ে মেয়েটির খোঁজ-খবর নেন এবং পরিবারটির পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
ভুক্তভোগীর দাদা বলেন, ‘আমার নাতনির যারা সর্বনাশ করছে আমি তাদের ফাঁসি চাই।’
স্থানীয় শিক্ষার্থী নাজিয়াত সুলতানা রিতি বলেন, ‘আমরা চাই দেশে যেন আর কোনো ধর্ষণের ঘটনা না ঘটে।’
এদিকে, অভিযোগ ওঠা কিশোরের মা বলেন, ‘আমার ছেলে নির্দোষ। সে এই ধরনের কাজ করতে পারে না। এখন মানুষ যদি তাকে দোষী বানায়, তাহলে সেখানে আমরা কী বলব?’
সিফাত মুন্সীকেও নির্দোষ দাবি করেন তার বাবা সোহাগ মুন্সী। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে।’
পটুয়াখালী পুলিশ সুপার আনোয়ার জাহিদ জানান, ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া আরও কেউ এতে সম্পৃক্ত আছে কিনা, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
প্রতিবাদকারীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত না হলে দেশব্যাপী আরও বড় আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।